Friday, August 19, 2016

অন্ধকার বলতে কি কোন কিছু আছে?? বিজ্ঞান কি বলে? বিস্তারিত জেনে নিন

নাহ মোটেই নাই।
কি আমাকে পাগল মনে হচ্ছে?
ঠিক আছে আসুন দেখি ফিজিক্স কি বলে এই বিষয়টা নিয়ে।
এই টিউনটা বোঝার জন্য আপনাকে প্রথমে জানতে হবে দেখার সংজ্ঞা। ইংরেজিতে এটাকে বলে Look। এই শব্দটা এসছে আর একটা শব্দ Lagud থেকে। এর মানে হচ্ছে মানুষের চোখ। মোটামুটি দেখার সংজ্ঞা হচ্ছে যখন কোন বস্তুর উপরে পতিত আলোর কনাগুলো ফেরত এসে আমাদের চোখে আঘাত হানে তখনই সেটা আমরা দেখতে পাই।
এবার প্রশ্ন হচ্ছে এই আলোর কনাগুলো কি??

আমদে চোখে যে আলোটা এসে পরে এটা আসলে মহাবিশ্বে থাকা বিশাল একটা ইলেকট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশন এর ক্ষুদ্রতম অংশ। এই ইলেকট্রো ম্যাগনেটিক রেডিয়শন এর অনেক অনেক ধরনের আলো আছে। এই ইলেকট্রো ম্যাগনেটিক রেডিয়েশন খবুই মারাত্মক হতে পারে আবার কোমলও হতে পারে। এই জিনিষটা একটা নির্দিস্ট ওয়েভ বা ঢেউয়ের মতন চলে। সেই ঢেউটির কিছু নির্দিস্ট প্যাটার্ন থাকে।
আর এখানেই হচ্ছে সমস্যাটা। আমরা কিন্তু সবকিছু দেখতে পাই না। আরো ভালো ভাবে বলতে গেলে আমরা আসলে কোন কিছুই দেখতে পাই না। কারন আমদের চোখের লিমিটেশন শুধু ওই বিশাল রেডিয়েশনের একটা অল্প অংশের মধ্যেই সিমাবদ্ধ। আরো ভালো করে বোঝার জন্য রেডিও ল্যাব নামক নিচের ওয়েবসাইটটাতে যেতে পারেন। এটা একটা সাইন্টিফিক ওয়েবসাইট।
রেডিও ল্যাব
এখানে দেখতে পারেন আমরা যেই জিনিষগুলো আমাদের চোখে দেখি সেগুলো অন্য কোন প্রানির চোখে দেখতে কেমন। যেমন আমরা একটা পাখিকে যেভাবে অনেকগুলো রঙের সমন্বয়ে রঙিন দেখি কিন্তু একটা বিড়াল কিন্তু সেভাবে দেখে না। কারন তার সেই কোষগুলো নেই যেগুলো আমাদের আছে। কিন্তু তার বদলে তার আছে আলাদা কিছু কোষ যেগুলো তাকে রাতে দেখতে সাহায্য করে।
আমরা যখন কোন কিছু দেখার কথা বলি তখন সেটা হচ্ছে চোখের Visual perception। এই জিনিষটা একটু জটিল জিনিষ। বুঝিয়ে বলছি। মনে করেন আলো তার সোর্স (সুর্য, লাইট বাল্ব) থেকে উৎপন্ন হয়ে একটা পাখির উপরে পরে, সেটা আবার বাউন্স করে ক্যামেরার মাধ্যমে আমাদের চোখের মধ্যে দিয়ে প্রতিবিম্ব হয়, সেই প্রতিবিম্ব আবার আমাদের চোখের কোষগুলো মাথার ভিতরে থাকা নিউরন কোষের মধ্যে ট্রান্সফার করে। তার পরে মস্তিস্ক আমাদেরকে বলে দেয় এটা আসলে একটা পাখি। তার পরে সেই মস্তিস্কই আমাদেরকে আবার মাথার মধ্যে থাকা পাখিদের অন্যান্য ছবি গুলোরে রিপ্লে করাইয়া তার কথা মনে করাইয়া দেয়। এভাবেই সবকিছু হয়ে যায় আরকি।
আলোর আবার আরো কিছু বিষয় আছে। এক একটা আলো এক একটা ওয়েভ বা ঢেউ এর মতন করে আসে। একট নির্দিস্ট ওয়েভের আলোই আমরা শুধু দেখতে পাই। বাকি গুলো মোটেই পাই না। যেমন আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি, এক্স-রে, গামা রে সহ অনেক অনেক ধরনের আলোক রশ্মি আছে যা আমাদের এই সাধারন চোখের মধ্যে মোটেই ধরে না। এরকম ওয়েভ বা ঢেউ এর সিস্টেমে এর কোন শেষ নেই যার মধ্যে আমরা শুধু অল্প একটুই দেখতে পাই। এখন একটা মানুষের খুলির মধ্যে ঘিলু আছে নাকি গোবর আছে সেটা দেখা আমাদের পক্ষে সম্ভব না। কিন্তু যদি আমাদের চোখে এক্সরে সংবেদনশিল থাকতো তবে আমরা সেই মানুষটার সবকিছুই দেখতে পেতাম। হয়ত এই ধরনের কোন কিছু যদি সত্যিই আমাদের চোখে থাকতো তবে আমাদের আর কোপর চোপর পরার প্রয়োজন পরতো না। কারন কাপর পরলেও সব দেখতে পেতাম না পরলেও সবকিছু দেখতে পেতাম।

খুবই মারাত্মক বিষয় হচ্ছে কিছু কিছু ওয়েভ আছে বা আলোক রশ্মি আছে যেগুলো আমাদেরকে কয়েক সেকেন্ট এর মধ্যে ভস্ম করে দেবে। যেমন আপনার বাসায় বা হোটেলে যে মাইক্রোয়েভ কুকার আছে এটিও একটা আলোর ওয়েভ যা দিয়ে রান্না করা হয় বা খাবার গরম করা হয়। চিন্তা করেন সামান্য খাবার গরম করতে পারে যে সে কি আপনাকে গরম করতে পারবে না?? কিন্তু আপনি কি দেখতে পান সেই আলোটা। মোটেই না।
উপরের ছবিটার দিকে তাকালে বুঝতে পারবেন আপনার মানে মানুষ্য প্রজাতির দেখার সিমাবদ্ধতা কত কম। উপরের পুরো কা
লো ব্যাজটা যদি আপনি আলোর বিভিন্ন মাইক্রোওয়েভ লিংক ধরেন তবে ছোট ওই অংশটুকুনই হচ্ছে আমাদের চোখের কাছে দৃশ্যমান। বাকিগুলো আমাদের চোখের দৃস্টিসিমার সাধ্যের বাইরে। এই পুরো সৃস্টিজগতের লক্ষাধিক ভাগের একভাগও আমরা ভালো করে খালি চোখে দেখতে পা্ই না। আলোর ওয়েভের এধরনের একটা প্যাটার্ন তৈরি করেছিল আমেরিকান এক বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক রা। তারে বলেছিলেন সেটার দৈর্ঘ হবে কয়েক হাজার কিলোমিটার। আর আমরা সেটাতে দেখতে পাব একটা সুইয়ের অংশ। আর আমরা সেই সামান্য টা দিয়েই তুলকালাম কান্ড ঘটাইয়া ফেলি।
কি বিশ্বাস হচ্ছে না আমার কথা। ওকে বাদ দেন এত কঠিন কথা বার্তা। আপনি আপনার বাসার টিভির রিমোট কন্ট্রোল টা হাতে নেন। খেয়াল করেন ঠিক উপরে একটা ছোট লাইটের মতন আছে। আপনি সাধারনত যখন টিভির চ্যানেল চেঞ্জ করেন সেটা জলে উঠার কথা কিন্তু সেটা হয় না। তার মানে কি এটা জ্বলে না?? অবশ্যই জলে। আপনি আপনার মোবাইলটা নিয়ে ক্যামেরা অন করুন। তার পরে সেই রিমোর্ট কন্ট্রোলটার উপরে ধরে কন্ট্রোলের যেকোন একটা বাটনে ক্লিক করুন। দেখবেন জ্বলে উঠেছে। অথচ আপনি খালি চোখে সেটা দেখতে পারছেন না। কারন আপনার মোবাইলের ক্যামেরার লেন্সগুলো যারা সৃস্টি করেছে তারা ওই আলোর ওয়েভগুলো ক্যাচ করার সিস্টেম দিয়ে দিয়েছে। কিন্তু আপনাকে যিনি সৃস্টি করেছেন তিনি এগুলোর কিছুই আপনাকে দেননি।
http://www.chromoscope.net/
আমরা রাতে আকাশে তাকালে শুধু অন্ধকার আর কিছু উজ্জল তারাগুলেই দেখতে পাই। কিন্তু আসলে এর থেকেও অনেক অনেক কিছু আছে। আমি উপরে দেয়া ওয়েবসাইটতাে ঢুকে হতবাক হয়ে গিয়েছি। তারা পুরো মহাবিশ্বের একটা ছোট অংশকে আমাদের চোখের দৃশ্যতা ছারাও প্রায় ৭ টা আলোর ওয়েভে দিখিয়েছেন সেগুলো দেখতে কেমন। যেমন আপনি এক্সরেতে গেলে দেখতে পাবেন এক্সরেতে আকশটা দেখতে কেমন লাগে। আবার যদি নিচের দিকে হাইড্রোজেন আলফা ওয়েভে যান দেখবেন সেটা কিভাবে অন্যরকম হয়ে যাচ্ছে। আবার গামা রেতে দেখতে পারেন। খুবই মজা পাইছি আমি দেখে। আপনিও দেখতে পারেন। তবে এগুলো একচুয়ালি আমাদের চোখের দেখার কথা না। বিজ্ঞানিরা এতে আমদের চোখের উপযোগি করে রঙ মিশিয়ে দেখিয়েছেন কেমন হতে পারে।

এখন আসি আমাদের পৃথিবী কে নিয়ে। ভালো করে খেয়াল করুন উপরের ছবিতে অনেকগুলো ছবি দেয়া আছে যার সবগুলোই পৃথিবীর। কিন্তু এর একটাই আমরা চিনি। কারন সেটাই আমরা খালি চোখে দেখতে পাই। বাকিগুলো অন্যান্য আলোর ওয়েভের মধে দিয়ে কালার করে দেখলে এভাবে দেখা যাবে।

যেমন উপরের ছবিটা পৃথিবীরই তবে এটি ইনফ্রারেড ওয়েভের মধ্যে দিয়ে দেখা গেছে। পুরো পৃথিবীর অভ্যান্তরে যে কি পরিমান গরম সেটা শুধু মাত্র এই ছবিটার দিকে তাকালেই আন্দাজ করতে পারবেন।

এই ছবিটা আল্ট্রা ভায়োলেট রশ্মি দ্বারা দেখা হয়েছে। কিন্তু বিজ্ঞানিরা এখনো শিউর না এটা আসলে কি জিনিস দেখাচ্ছে।

এক্সরে দিয়ে তোলা ছবিটা খেয়াল করুন এখানে আমাদের মেরু অঞ্চলের অত্যান্ত উচ্চ ম্যাগনেটিক বা চুম্বক শক্তিটা দেখাচ্ছে।

এটা গামা রেডিয়েশন দিয়ে তোলা ছবি। এটাতে দেখা যাচ্ছে পৃথিবীর চার পাশে একটা সাধা স্তর। আসলে এটা বুঝাচ্ছে কিভাবে পৃথিবীর চার পাশে থাকা ওজন স্তরটি আমাদের কে মহাবিশ্ব থেকে আশা উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন গামা রে গুলোথেকে রক্ষা করছে।

এবার আসি মারাত্মক কিছু বিষয় নিয়ে কথা বার্তা বলতে। আমরা অনেকেই বিশ্বাস করি না। আমাদের ধারনা আমরা যা দেখি এর বাইরে আসলে এই পৃথিবীতে আরো কিছুই নাই। কিন্তু বৈজ্ঞানিক ভাবে আপনাদের সেই ধারনা একেবারে ভুল।

এখন যদি এমন কোন প্রানি বা বস্তু থেকে থাকে যেটা শুধু মাত্র এক্সরে ওয়েভে দেখা যাবে। সেটা তাহলে আমাদের এই সাধারন চোখে মোটেই ধরার পরবে না। এমনকি সেই নির্দিস্ট ক্যামেরাতে আপনি ভালো ভাবে দেখতে পাবেন না। কারন এক্সরে ক্যামেরাতে আমরা যা দেখি সেটাতে হালকা রং করা থাকে। আর রং করা মানে জিনিষটার আসল চেহারা আপনার চোখে অধরাই থেকে যাবে।

যদি আপনি বলেন ভুত, জীন বা অন্যকোন জিনিষ আছে। তবে সেটার একটা বৈজ্ঞানিক এক্সপ্লেনেশন হতে পারে তাদের দৃশ্যতা আমাদের চোখের সিমার মধ্যে নাই। তবে নিশ্চৎ ভাবে ধরে রাখেন এই মহাবিশ্বে অসংখ জিনিষ আছে যেগুলো আমাদের এই সাধারন চোখের দেখার কোন সাধ্য নাই। তা আপনি যত ক্যামেরা আর রঙচঙই লাগিয়ে দেখতে চান না কেন। বিজ্ঞানিরা এই বিষয়গুলো নিয়ে এখনো প্রচুর গবেষনা করছেন যাতে আমাদের দৃশ্যতার সিমাকে আরো বিস্তৃত করা যায়।

এবার তো বুঝতে পারছেন কেন আমি বলেছি রাতের আকাশে বা দিনের বেলা অন্ধকার বলতে কিছু নাই। অন্ধকার বলতে কোন কিছুই সৃস্টিই হয় নি। শুধু মাত্র আপনার চোখের মধ্যে ওই আলোটুকু ধরার কোন ক্ষমতা নাই বলেই আপনি দেখতে পাচ্ছেন না। তাই নিজের চোখ নিয়ে এতটা বড়াই কইরেন না। অদেখা জিনিষ দেখার ক্ষমতা আপনাকে দেয়া হয় নি। যত বড়াই করবেন ততই নিজেকে ছোট করবেন এই বিশ্বভ্রম্মান্ডে কাছে। এমনিতেই আপনি এই বিশ্বভ্রম্মান্ডের মধ্যে অত্তন্তক্ষদ্র একটা জিনিষ। তাই নিজেকে আর ছোট করবেন না।
এই লেখাটা আামর পৃথিবীর মানচিত্র নিয়ে লেখার প্রথম পর্ব। এর পরের পর্বের বিষয় থাকবে আমরা যে মানচিত্র দেখছি সেটা একেবারে পুরোটাই ভুল। কিন্তু কেন সেই ভুলটাই আমরা সঠিক বলে ধরে নিচ্ছি। এবং বিজ্ঞানিরাও সেটাকে সঠিক বলছেন। আমার সাথেই থাকুন একই সাথে আমরা শিখবো বিজ্ঞানের অজানা বিষয়গুলো অসাধারন মজা করে।
বরাবরে মতনই লেখাটার জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি ইউটিউবের বিখ্যাত চ্যানেল ভি-সোস এর মাইকেলেকে। তার ব্যাখ্যা করার ক্ষমতা অসাধারন। আসি সেটাকেই কাজে লাগিয়েছি।

0 comments:

Post a Comment