টেকটিউনস এ আমার এইলেখাটি সর্বপ্রথম লেখা হওয়ায় কিছু ভুল ত্রুটি থাকতে পারে। পাঠকরা একটু ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে পড়তে অনুরোধ করা হলো।
বি:দ্র: সবাইকে অনুরোধ করব লেখাটি পড়ার পর নিজেদের ‘হেপাটাইটিস’ আছে কিনা এটা পরীক্ষা করাবেন খুব বেশি খরচ হয় না ৪০০-৫০০ টাকা লাগে পরীক্ষা করাতে।

২০১০ সাল থেকে প্রতিবছর ২৮ জুলাই ‘বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস’ পালিত হয়ে আসছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উদ্যোগে। লিভারের বিভিন্ন ধরনের রোগ ও রোগ থেকে মুক্তির উপায় নিয়ে সভা-সেমিনারসহ নানা আয়োজনে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি পালন করা হয়। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘হেপাটাইটিস নির্মূল’।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, পৃথিবীতে দুই বিলিয়ন বা ২০ কোটি লোক এই ক্ষতিকারক ভাইরাসে সংক্রমণের শিকার। প্রতিবছর বিশ্বে ৫০০ মিলিয়ন মানুষ হেপাটাইটিস ভাইরাসে আক্রান্ত হয়। এদের মধ্যে সারা বিশ্বে শুধু হেপাটাইটিস বি’র সংক্রমণে মারা যাচ্ছে সাড়ে ১০ লাখ মানুষ। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৫ শতাংশ মানুষ হেপাটাইটিস-বি ভাইরাসের দীর্ঘমেয়াদি বাহক এবং এদের ২০ শতাংশ লিভার ক্যান্সার ও সিরোসিসের কারণে মারা যায়। বাস্তবে হেপাটাইটিস-বি এইডসের চেয়ে ১০০ গুণ বেশি সংক্রামক এবং প্রতিবছর এইডস (AIDS) এর কারণে পৃথিবীতে যত লোক মৃত্যুবরণ করে তার চেয়ে বেশি মৃত্যুবরণ করে হেপাটাইটিস-বি (HBV)’র কারণে।

ল্যাটিন ভাষায় লিভারকে বলা হয় হেপাট। লিভারে প্রদাহ সৃষ্টি হলে তাকে বলা হয় হেপাটাইটিস। বিশ্বব্যাপী হেপাটাইটিস ‘বি’ ভাইরাস একটি ভয়াবহ স্বাস্থ্য সমস্যা। হেপাটাইটিস ‘বি’ এক ধরনের ভাইরাস যা মুলত লিভারকে আক্রমণ করে। এর সংক্রমণের ফলে পৃথিবীর অন্যতম ঘাতক ব্যাধি লিভার সিরোসিস ও লিভার ক্যান্সার হতে পারে। রক্ত ও রক্তজাত পদার্থ মূলত এই ভাইরাসের বাহক। ভাইরাস ছাড়াও বিভিন্ন কারণে- ব্যাকটেরিয়া, ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ও গলব্লাডারের অসুস্থতা থেকে হেপাটাইটিস হতে পারে।
এই ‘বি’ ভাইরাসকে আমরা দুই ভাগে ভাগ করি। একটি একিউট (স্বল্প মেয়াদি) হেপাটাইটিস হতে পারে। আরেকটি ক্রনিক হেপাটাইটিস (দীর্ঘ মেয়াদি) হতে পারে। যদি ‘বি’ ভাইরাস কারো শরীরে ঢোকে এবং এটি ছয় মাস পর্যন্ত অবস্থান করে, তখন তাকে আমরা একিউট হেপাটাইটিস বলি। আর যদি ছয় মাসের বেশি অবস্থান করে তখন একে ক্রনিক হেপাটাইটিস বলি।
এখন এই ক্রনিক হেপাটাইটিস-বি দুইভাবে থাকতে পারে। অর্থাৎ অ্যাকটিভ (কার্যকর) অবস্থায় থাকতে পারে। অথবা ইনঅ্যাকটিভ (নিষ্ক্রিয়) অবস্থায় থাকতে পারে।
১। Inactive Carrier যাদের ভাইরাল ডি এন এ 2000 IU/ml এর কম বা নেগেটিভ
২। Active Carrier যাদের ভাইরাল ডি এন এ 2000 IU/ml এর বেশি।


বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সব নবজাতককে হেপাটাইটিস বি’র টিকা নেয়া অত্যন্ত জরুরি বলে ঘোষণা করেছে এবং ইতোমধ্যে ৮০টির বেশি দেশ এ আহ্বানে সাড়া দিয়ে টিকা দেয়ার সম্প্রসারিত কর্মসুচি গ্রহণ করেছে।বাংলাদেশ সরকার সকল শিশুকে হেপাটাইটিস বি ভ্যাক্সিন দেয়ার জন্য একে ইপিআই ভ্যাক্সিন কার্যক্রমের অর্ন্তভুক্ত করেছে। এ টিকা যে কোনো বয়সে যে কোনো দিন নেয়া যায়। শতকরা নব্বই ভাগ মানুষের শরীরে এই ভ্যাক্সিন প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলে।
নির্দিস্ট নিয়মে টিকা গ্রহণের মাধ্যমে হেপাটাইটিস -বি প্রতিরোধ করা সম্ভব। মনে রাখবেন টিকা গ্রহণের আগে অবশ্যই রক্তে হেপাটাইটিস -বি আছে কিনা পরীক্ষা করে নেয়া উচিৎ। যদি হেপাটাইটিস-বি পজিটিভ থাকে তবে টিকা নেয়া যাবে না।
৪টি টিকা আছে। প্রথম তিনটি এক মাস পর পর। শেষটি প্রথমটি নেয়ার এক বছর পরে নিতে হবে। যদি পজিটিভ হন, তবে টিকা দিয়ে আপনার কোন লাভ নেই। আর যদি নেগেটিভ হন তাহলেই আপনি এটি নিতে পারবেন এবং আপনার শরীরে এর বিরুদ্ধে এন্টিবডি তৈরি হবে। ৯৫ ভাগ ক্ষেত্রেই এটি কার্যকরী এবং শিশুদের ক্ষেত্রে আরও বেশি। বিভিন্ন কোম্পানি ভেদে, তৈরি প্রণালী ও খরচ সাপেক্ষে এক এক ভ্যাক্সিনের দাম এক এক রকম। এক এক ডোজে আনুমানিক ৫০০ / ৬০০ খরচ হতে পারে।

সাধারণত লিভার এর পরিবর্তনের (সিরোসিস) সাথে সাথে এসোফেগাল ভেরিক্স গুলো বদলে যায়। রক্তের ক্রমাগত চাপে এই ভ্যারিক্স গুলো ছিঁড়ে গিয়ে রোগীর নাক-মুখ দিয়ে রক্তপাত ঘটতে পারে, এবং রোগীর মৃত্যু হতে পারে।
উন্নত বিশ্বে ভ্যারিক্স চিকিৎসায় এক ধরনের কৃত্রিম রক্তনালী (Steosis) তৈরি করে লিভারের অকার্যকর অংশ থেকে রক্তনালী সরাসরি ভ্যারিক্স এ প্রবাহিত করা হয়। বিকল্প হিসেবে আমাদের দেশে EVL বা এসোফেগাল ভ্যারিক্স লাইগেশন পদ্ধতি চালু আছে। তুলনামূলক ভাবে যার খরচ অত্যন্ত কম। মাত্র ১২/১৫ হাজার টাকায় ৩/৪ টি ভ্যারিক্স লাইগেশন করা সম্ভব। এরপর বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রোগীর ডায়াবেটিক বা অন্য কোনো স্বাস্থ্য সমস্যা জেনে নিয়ে রোগীর জন্য থেরাপি নির্ধারণ করবেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তাদের ওয়েবপেজে হেপাটাইটিস ‘বি’ এর চিকিৎসায় ‘টেনোফোভির’ অথবা ‘এন্টেকাভির’ ট্যাবলেট খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
উন্নত চিকিৎসার আশায় আজকাল অনেকেই বাংলাদেশ ছেড়ে ব্যাংকক, ভারত কিম্বা থাইল্যান্ডে যান।
আসলে আমাদের দেশে অণুজীব বিজ্ঞান গবেষণা এবং এ ধরনের রোগ নির্ণয়ের যে সমস্ত ল্যাবরেটরি আছে তা মান সম্মত নয় বিধায় অনেক রোগীকে তার PCR পরীক্ষার জন্য রক্ত ভারত-সিঙ্গাপুর প্রেরণ করতে হয়। বাংলাদেশে বিভিন্ন ল্যাব এই টেস্টগুলো করছে তবে মোটেও নির্ভুল পরীক্ষা করতে পারছেনা।
আমাদের দেশের আলট্রা-সাউন্ড মেশিনগুলোর মান কিম্বা সনো-লজিস্টদের দক্ষতা এতই কম যে তারা সঠিক ভাবে রোগ নিরূপণ করতে পারেনা। তারপরেও বর্তমানে বাংলাদেশে হেপাটাইটিস ‘বি’ এর চিকিৎসায় ডাক্তারগণ পাশ্চাত্যের তুলনায় ভালো ফল পাচ্ছেন।

Liver Transplantation লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত রোগীর জীবন রক্ষাকারী পদক্ষেপ হিসাবে বিবেচনা করা হয়। অপারেশন করে কোন ব্যক্তির রোগাক্রান্ত লিভার অপসারণ করে সেই স্থানে দাতা ব্যক্তির সম্পুর্ন বা আংশিক সুস্থ লিভার প্রতিস্থাপন করা কে Liver Transplantation বলে। বর্তমানে বাংলাদেশে Liver Transplantation সম্ভব। এতে বাংলাদেশে প্রায় ৫০ লাখ টাকা খরচ হয়। আপনি চাইলে মানসম্মত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে থেকেও Liver Transplantation করাতে পারেন।
এবার আপনি সিদ্ধান্ত নিন টিকা নিয়ে ৩০০০ হাজার টাকা খরচ করবেন নাকি Liver Transplantation করে ৫০ লাখ টাকা খরচ করবেন। আর যাদের হেপাটাইটিস-বি পজেটিভ তারা দেরি না করে লিভার বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
তাই সচেতনতাই প্রতিরোধের একমাত্র উপায়। হেপাটাইটিস সম্পর্কে সচেতন হোন, সুস্থ থাকুন।
তথ্যসূত্রঃ উইকিপিডিয়া, বাংলাদেশ সরকারের জাতীয় তথ্যকোষ, ইউএসএআইডি, ভয়েস অফ আমেরিকা, কানাডার “দি বেঙ্গলি টাইমস”, মারকোলা.কম, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ওয়েবএমডি.কম, বাংলানিউজ২৪.কম।
বি:দ্র: সবাইকে অনুরোধ করব লেখাটি পড়ার পর নিজেদের ‘হেপাটাইটিস’ আছে কিনা এটা পরীক্ষা করাবেন খুব বেশি খরচ হয় না ৪০০-৫০০ টাকা লাগে পরীক্ষা করাতে।

২০১০ সাল থেকে প্রতিবছর ২৮ জুলাই ‘বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস’ পালিত হয়ে আসছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উদ্যোগে। লিভারের বিভিন্ন ধরনের রোগ ও রোগ থেকে মুক্তির উপায় নিয়ে সভা-সেমিনারসহ নানা আয়োজনে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি পালন করা হয়। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘হেপাটাইটিস নির্মূল’।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, পৃথিবীতে দুই বিলিয়ন বা ২০ কোটি লোক এই ক্ষতিকারক ভাইরাসে সংক্রমণের শিকার। প্রতিবছর বিশ্বে ৫০০ মিলিয়ন মানুষ হেপাটাইটিস ভাইরাসে আক্রান্ত হয়। এদের মধ্যে সারা বিশ্বে শুধু হেপাটাইটিস বি’র সংক্রমণে মারা যাচ্ছে সাড়ে ১০ লাখ মানুষ। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৫ শতাংশ মানুষ হেপাটাইটিস-বি ভাইরাসের দীর্ঘমেয়াদি বাহক এবং এদের ২০ শতাংশ লিভার ক্যান্সার ও সিরোসিসের কারণে মারা যায়। বাস্তবে হেপাটাইটিস-বি এইডসের চেয়ে ১০০ গুণ বেশি সংক্রামক এবং প্রতিবছর এইডস (AIDS) এর কারণে পৃথিবীতে যত লোক মৃত্যুবরণ করে তার চেয়ে বেশি মৃত্যুবরণ করে হেপাটাইটিস-বি (HBV)’র কারণে।

ল্যাটিন ভাষায় লিভারকে বলা হয় হেপাট। লিভারে প্রদাহ সৃষ্টি হলে তাকে বলা হয় হেপাটাইটিস। বিশ্বব্যাপী হেপাটাইটিস ‘বি’ ভাইরাস একটি ভয়াবহ স্বাস্থ্য সমস্যা। হেপাটাইটিস ‘বি’ এক ধরনের ভাইরাস যা মুলত লিভারকে আক্রমণ করে। এর সংক্রমণের ফলে পৃথিবীর অন্যতম ঘাতক ব্যাধি লিভার সিরোসিস ও লিভার ক্যান্সার হতে পারে। রক্ত ও রক্তজাত পদার্থ মূলত এই ভাইরাসের বাহক। ভাইরাস ছাড়াও বিভিন্ন কারণে- ব্যাকটেরিয়া, ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ও গলব্লাডারের অসুস্থতা থেকে হেপাটাইটিস হতে পারে।
এই ‘বি’ ভাইরাসকে আমরা দুই ভাগে ভাগ করি। একটি একিউট (স্বল্প মেয়াদি) হেপাটাইটিস হতে পারে। আরেকটি ক্রনিক হেপাটাইটিস (দীর্ঘ মেয়াদি) হতে পারে। যদি ‘বি’ ভাইরাস কারো শরীরে ঢোকে এবং এটি ছয় মাস পর্যন্ত অবস্থান করে, তখন তাকে আমরা একিউট হেপাটাইটিস বলি। আর যদি ছয় মাসের বেশি অবস্থান করে তখন একে ক্রনিক হেপাটাইটিস বলি।
এখন এই ক্রনিক হেপাটাইটিস-বি দুইভাবে থাকতে পারে। অর্থাৎ অ্যাকটিভ (কার্যকর) অবস্থায় থাকতে পারে। অথবা ইনঅ্যাকটিভ (নিষ্ক্রিয়) অবস্থায় থাকতে পারে।
১। Inactive Carrier যাদের ভাইরাল ডি এন এ 2000 IU/ml এর কম বা নেগেটিভ
২। Active Carrier যাদের ভাইরাল ডি এন এ 2000 IU/ml এর বেশি।
কেন এটা মরণ ভাইরাস??
কারন অধিংকাশ মানুষই জানেনা যে সে এই রোগে আক্রান্ত! আর যখন জানতে পারে তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে! হয়তো সে যখন জানতে পারে তখন তার সিরোসিস কিংবা ক্যানসার হয়ে গেছে! তাছাড়া একবার ক্রনিক সংক্রমনে আক্রন্ত হলে তার সম্পুর্ন সেরে উঠার সম্ভাবনা খুব কম! এবং লিভার ক্যানসার ধরা পড়ার ১মাসের ভিতর অধিকাংশ রোগী মারা যায়!!এই রোগ কিভাবে ছড়ায়?

- সাধারনত শিশুর জন্মের সময় কিংবা শৈশবে অন্য আক্রান্ত ব্যক্তির রক্তের মাধ্যমে এ রোগ সবচেয়ে বেশি ছড়ায়।
- বাবা মায়ের যেকোনো একজন আক্রান্ত থাকলে তাদের নবজাতক আক্রান্ত হতে পারে।
- গ্রামে গঞ্জের স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রগুলোতে ডিসপোজেবল নিডল ব্যবহার না করে থাকলে।
- রক্তক্ষরন ও অন্যান্য কারণে সৃষ্ট রক্তশূন্যতার চিকিৎসায় বারবার ব্লাড ট্রান্সফিউশন করলে।
- একই নিডল ও সিরিঞ্জের মাধ্যমে একাধিক ব্যক্তির মাদক দ্রব্য গ্রহণের মাধ্যমে।
- আকুপাংচারের যন্ত্রপাতি ভালোভাবে স্ট্যারিলাইজ করা না হলে ভাইরাস ছড়াতে পারে।
- জৈবিক মিলনের মাধ্যমে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে ছড়াতে পারে। অসামঞ্জস্য শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনে এ ভাইরাস ছড়াতে পারে।
- অন্যের ব্যবহৃত সুচ/সিরিঞ্জ ব্যবহারের মাধ্যমে এই ভাইরাস ছড়ায়।
- আক্রান্ত ব্যক্তি অন্যকে রক্ত অথবা অন্য কোন অঙ্গ দান করলে এ রোগ ছড়ায়।
- দাঁতের চিকিৎসার সময় জীবাণুমুক্ত যন্ত্রপাতি ব্যবহার না করলে।
আমি কি এই রোগে আক্রান্ত?
হেপাটাইটিস-বি একটি মারাত্মক সংক্রামক রোগ যা যকৃত বা লিভার কে আক্রমণ করে। অনেক সময় সংক্রমণের প্রথম দিকে কোন লক্ষণ প্রকাশ পায় না। সংক্রমণের পর রোগের লক্ষণ প্রকাশ পেতে ৩০ থেকে ১৮০ দিন সময় লাগতে পারে। তবে অনেক ক্ষেত্রে-- চোখ হলুদ হয়ে যায়, একে জন্ডিস বলে।
- প্রশ্রাবের রং গাঢ় হলুদ হয়।
- পেটের ডান দিকে প্রচণ্ড বা হালকা ব্যথা অনুভব হয় এবং সেই সাথে গায়ে প্রচণ্ড জ্বর হয়।
- খাদ্যে অরুচি এবং বমি বমি ভাব বা বমি হয়ে থাকে।
- আক্রান্ত ব্যক্তি সবসময় অস্বস্তি অনুভব করে।
- ক্লান্ত এবং অবসাদ অনুভব হয়।
- শরীরের চামড়া হলুদ হয় এবং চোখ সাদা ফ্যাকাশে হয়।
- শরীর চুলকায়। (এটি সকল হেপাটাইটিস রোগের লক্ষণ)
- কিছু লোকের ফ্লুর মতো মাথাব্যথা করে।
- অনেকের শীত শীত লাগে।
- কারও কারও গা শিরশির করে।
- আস্তে আস্তে ওজন কমবে।
- রক্তস্বল্পতা দেখা দেয়।
- অজীর্ণ বা বদহজমের অভাবে দীর্ঘদিন ডায়রিয়া হয়।
- অনেকের দীর্ঘদিন ধরে শরীর গরম থাকে কিন্তু জ্বর হয় না।
- কেউ কেউ হঠাৎ অজ্ঞানও হয়ে যান হেপাটাইটিস-বি ভাইরাস এর কারণে।
কিভাবে বুঝবো আমার এই রোগ হয়েছে?
উপরোক্ত উপসর্গগুলো দেখে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারগণ বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে থাকেন। রক্তের HBsAg পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া যায়। এছাড়াও উপসর্গ দেখে, লিভারের Ultrasonogram, HBeAg, Anti-HBe, Billirubin, S. ALT (SGPT), AST (SGOT), Hemoglobin, RT-PCR, HBV DNA, ALPHA, CT Angiogram, Endoscopy ইত্যাদির মাধ্যমেও রোগের জটিলতা নির্ণয় করা হয়।আমরা কিভাবে এই রোগ থেকে মুক্ত থাকতে পারি?
ইতিহাসে খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দীতে হিপোক্রেটিসের আমলে মহামারী হিসেবে জন্ডিসের কথা পাওয়া যায়। তবে ড. সাউল ক্রুগম্যান ১৯৫০ সালে একদল মানসিক রোগীর উপর গবেষণা চালিয়ে প্রথম এ ভাইরাসটি শনাক্ত করেন। তার দেয়া তত্ত্বের উপর ভিত্তি করে পরবর্তীতে ড. ব্লুমবার্গ হেপাটাইটিস-বি ভ্যাক্সিন তৈরি করেন। বর্তমানে ড. ব্লুমবার্গ এর তৈরিকৃত ভ্যাক্সিন এর পরিবর্তে রিকমবিন্যান্ট ভ্যাক্সিন ব্যবহার করা হয়।(১) টিকা গ্রহণের মাধ্যমে

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সব নবজাতককে হেপাটাইটিস বি’র টিকা নেয়া অত্যন্ত জরুরি বলে ঘোষণা করেছে এবং ইতোমধ্যে ৮০টির বেশি দেশ এ আহ্বানে সাড়া দিয়ে টিকা দেয়ার সম্প্রসারিত কর্মসুচি গ্রহণ করেছে।বাংলাদেশ সরকার সকল শিশুকে হেপাটাইটিস বি ভ্যাক্সিন দেয়ার জন্য একে ইপিআই ভ্যাক্সিন কার্যক্রমের অর্ন্তভুক্ত করেছে। এ টিকা যে কোনো বয়সে যে কোনো দিন নেয়া যায়। শতকরা নব্বই ভাগ মানুষের শরীরে এই ভ্যাক্সিন প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলে।
নির্দিস্ট নিয়মে টিকা গ্রহণের মাধ্যমে হেপাটাইটিস -বি প্রতিরোধ করা সম্ভব। মনে রাখবেন টিকা গ্রহণের আগে অবশ্যই রক্তে হেপাটাইটিস -বি আছে কিনা পরীক্ষা করে নেয়া উচিৎ। যদি হেপাটাইটিস-বি পজিটিভ থাকে তবে টিকা নেয়া যাবে না।
৪টি টিকা আছে। প্রথম তিনটি এক মাস পর পর। শেষটি প্রথমটি নেয়ার এক বছর পরে নিতে হবে। যদি পজিটিভ হন, তবে টিকা দিয়ে আপনার কোন লাভ নেই। আর যদি নেগেটিভ হন তাহলেই আপনি এটি নিতে পারবেন এবং আপনার শরীরে এর বিরুদ্ধে এন্টিবডি তৈরি হবে। ৯৫ ভাগ ক্ষেত্রেই এটি কার্যকরী এবং শিশুদের ক্ষেত্রে আরও বেশি। বিভিন্ন কোম্পানি ভেদে, তৈরি প্রণালী ও খরচ সাপেক্ষে এক এক ভ্যাক্সিনের দাম এক এক রকম। এক এক ডোজে আনুমানিক ৫০০ / ৬০০ খরচ হতে পারে।
(২) ব্যক্তিগত পদক্ষেপ
- সেলুনে চুল, দাড়ি কাটার সময় আলাদা (Separate and disposable) ব্লেড ব্যবহার করা
- হেপাটাইটিস-বি ভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে শারীরিক সম্পর্ক থেকে বিরত থাকা
- নিরাপদ শারীরিক সম্পর্ক বজায় রাখা
- শিরাপথে মাদক গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকা
- শরীরে ছিদ্র বা উলকি আঁকার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা
- ইনজেকশন দেয়ার সময় একবার ব্যবহারের পর ফেলে দেয়া হয় (Disposable Syringe) এমন সিরিঞ্জ ব্যবহার করতে হবে
- ধর্মীয় অনুসাশন মেনে চলতে হবে।
- পরিবারের সবাইকে টিকা দিতে হবে।
লিভার সিরোসিসের কি ধরনের চিকিৎসা আছে?

সাধারণত লিভার এর পরিবর্তনের (সিরোসিস) সাথে সাথে এসোফেগাল ভেরিক্স গুলো বদলে যায়। রক্তের ক্রমাগত চাপে এই ভ্যারিক্স গুলো ছিঁড়ে গিয়ে রোগীর নাক-মুখ দিয়ে রক্তপাত ঘটতে পারে, এবং রোগীর মৃত্যু হতে পারে।
উন্নত বিশ্বে ভ্যারিক্স চিকিৎসায় এক ধরনের কৃত্রিম রক্তনালী (Steosis) তৈরি করে লিভারের অকার্যকর অংশ থেকে রক্তনালী সরাসরি ভ্যারিক্স এ প্রবাহিত করা হয়। বিকল্প হিসেবে আমাদের দেশে EVL বা এসোফেগাল ভ্যারিক্স লাইগেশন পদ্ধতি চালু আছে। তুলনামূলক ভাবে যার খরচ অত্যন্ত কম। মাত্র ১২/১৫ হাজার টাকায় ৩/৪ টি ভ্যারিক্স লাইগেশন করা সম্ভব। এরপর বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রোগীর ডায়াবেটিক বা অন্য কোনো স্বাস্থ্য সমস্যা জেনে নিয়ে রোগীর জন্য থেরাপি নির্ধারণ করবেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তাদের ওয়েবপেজে হেপাটাইটিস ‘বি’ এর চিকিৎসায় ‘টেনোফোভির’ অথবা ‘এন্টেকাভির’ ট্যাবলেট খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
উন্নত চিকিৎসার আশায় আজকাল অনেকেই বাংলাদেশ ছেড়ে ব্যাংকক, ভারত কিম্বা থাইল্যান্ডে যান।
আসলে আমাদের দেশে অণুজীব বিজ্ঞান গবেষণা এবং এ ধরনের রোগ নির্ণয়ের যে সমস্ত ল্যাবরেটরি আছে তা মান সম্মত নয় বিধায় অনেক রোগীকে তার PCR পরীক্ষার জন্য রক্ত ভারত-সিঙ্গাপুর প্রেরণ করতে হয়। বাংলাদেশে বিভিন্ন ল্যাব এই টেস্টগুলো করছে তবে মোটেও নির্ভুল পরীক্ষা করতে পারছেনা।
আমাদের দেশের আলট্রা-সাউন্ড মেশিনগুলোর মান কিম্বা সনো-লজিস্টদের দক্ষতা এতই কম যে তারা সঠিক ভাবে রোগ নিরূপণ করতে পারেনা। তারপরেও বর্তমানে বাংলাদেশে হেপাটাইটিস ‘বি’ এর চিকিৎসায় ডাক্তারগণ পাশ্চাত্যের তুলনায় ভালো ফল পাচ্ছেন।
হেপাটাইটিস-বি জনিত লিভার সিরোসিস এর শেষ চিকিৎসা কি?

Liver Transplantation লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত রোগীর জীবন রক্ষাকারী পদক্ষেপ হিসাবে বিবেচনা করা হয়। অপারেশন করে কোন ব্যক্তির রোগাক্রান্ত লিভার অপসারণ করে সেই স্থানে দাতা ব্যক্তির সম্পুর্ন বা আংশিক সুস্থ লিভার প্রতিস্থাপন করা কে Liver Transplantation বলে। বর্তমানে বাংলাদেশে Liver Transplantation সম্ভব। এতে বাংলাদেশে প্রায় ৫০ লাখ টাকা খরচ হয়। আপনি চাইলে মানসম্মত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে থেকেও Liver Transplantation করাতে পারেন।
এবার আপনি সিদ্ধান্ত নিন টিকা নিয়ে ৩০০০ হাজার টাকা খরচ করবেন নাকি Liver Transplantation করে ৫০ লাখ টাকা খরচ করবেন। আর যাদের হেপাটাইটিস-বি পজেটিভ তারা দেরি না করে লিভার বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
আক্রান্ত ব্যক্তির জীবন যাপন পদ্ধতি
- নিরাপদ শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তুলুন।
- রেজার ব্লেড এবং দাঁত মাজার ব্রাশ অন্যের সাথে আদান-প্রদান না করা।
- গর্ভবতী মহিলা যদি হেপাটাইটিস-বি ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয় তাহলে দ্রুত ডাক্তারকে জানাতে হবে যাতে গর্ভের শিশুর কোন ক্ষতি না হয়।
- কাঁচা সালাদ, ফল-মূল বেশি খাবেন।
- তেল-চর্বি যুক্ত খাবার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
- গরু বা খাসির মাংস যেগুলো লাল মাংস হিসেবে পরিচিত এগুলো খাবেন না।
- আধপোড়া খাবার খাবেন না, যেমন- গ্রিল।
- লবণ বা সোডিয়াম সল্ট একেবারেই খাবেন না।
- ভিটামিন বি, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যথা বিটা ক্যারোটিন, ভিটামিন-সি, ভিটামিন-ই যুক্ত খাবার বেশি খাবেন।
- প্রেসক্রিপশন ছাড়া এবং হেপাটলজিস্ট এর পরামর্শ ছাড়া ঔষুধ খাবেন না, বিশেষ করে হারবাল ঔষুধ!
- খাবারে কোন বাধা না থাকলেও ফ্যাটি খাবার কম এবং সবজি বেশি খাবেন।
- প্রতিদিন অন্তত ৪০ মিনিট হাঁটবেন।
- ব্যায়ামের অভ্যাস করবেন।
- দিনে একবেলার বেশি ভাত খাবেন না, দুই বেলা রুটি খাবেন।
- ধূমপান, মদ্যপান নিষিদ্ধ।
- অযথা কোন মাল্টিভিটামিন খাবেন না।
- প্রচুর বিশ্রাম নিন।
- শৃঙ্খলিত জীবন যাপন করুন।
- ভাত, রুটি, সুজি, বার্লি, শাক-সবজি, গ্লুকোজ, মাখন তোলা দুধ, ছানা, চর্বিহীন মাছ খাওয়া যাবে। কিন্তু মাখন, ঘি, চর্বিজাতীয় খাবার একেবারে বাদ।
- তবে রোগীকে বেশি করে পানি খাওয়ানো প্রয়োজন।
তাই সচেতনতাই প্রতিরোধের একমাত্র উপায়। হেপাটাইটিস সম্পর্কে সচেতন হোন, সুস্থ থাকুন।
তথ্যসূত্রঃ উইকিপিডিয়া, বাংলাদেশ সরকারের জাতীয় তথ্যকোষ, ইউএসএআইডি, ভয়েস অফ আমেরিকা, কানাডার “দি বেঙ্গলি টাইমস”, মারকোলা.কম, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ওয়েবএমডি.কম, বাংলানিউজ২৪.কম।
0 comments:
Post a Comment