Friday, August 26, 2016

জানুন জঙ্গীদের কেমিক্যাল ব্রেইন-ওয়াশ সম্পর্কে! সাবধান হোন

সাম্প্রতিক সময়ের বহুল আলোচিত ঘটনা গুলশান ট্রাজেডি। এটা নিয়ে মানুষের আগ্রহের অন্ত নেই। চলছে জঙ্গিদের নিয়ে বিস্তর গবেষণাও। গবেষণা চলছে সেইসব যুবক ছেলেদের নিয়েও যারা তাদের বুদ্ধি-বিবেচনা হারিয়ে এরকম একটা ধ্বংসাত্মক কাজে নিজেদের জড়িয়েছে।
আপনার কি মনে হয়, একটা ফুটবল প্রিয় ছেলে যে কিনা সারাদিন ফুটবল খেলত, এমনকি ঘুমানোর সময়ও গ্লাভ্‌স পড়েই ঘুমিয়ে যেত, সেই ছেলে কোনো বাজে দলের পাল্লায় পড়ে এরকম একটা কাজে নিজেকে জড়াতে পারে!
এত বছরের অর্জিত জ্ঞান নিমেষেই হারিয়ে ফেলতে পারে শুধুমাত্র কারো কথায়? আসুক বিষয়টা ব্যাখ্যা করা যাক।
ধরা যাক, আইএস বা যেকোন জঙ্গী বাহিনীই আপনাকে ধরল। তারা ধরা যাক অন্য দেশের। তাই তাদের ভাষাটাও ভিন্ন। তারা আপনাকে আরবী দিয়ে কিছু শক্ত শক্ত যুক্তি দিয়ে তাদের দলে যেতে বলল। তাদের ভাষা শুনে আপনি এমনটা ব্রেইন-ওয়াশ হতে পারবেন না যাতে করে একদম এভাবে মানুষ মারা যায় বিবেচনা ছাড়াই।
হিন্দিতে যদি ব্যাখ্যা করে তাহলে আংশিক কিছু বুঝবেন। কিন্তু বোঝার মাত্রাটা এত হবে না যার কারণে আপনি এরকম হত্যাযজ্ঞে নামতে পারেন।
বাংলাতে ব্যাখ্যা করলে আপনি প্রথমে ভয় পাবেন। অবাক হবেন। যেতে চাইবেন না। আর গেলেও আপনার মধ্যে স্বতঃস্ফূর্ততা থাকবে না।
তাহলে প্রশ্ন হলো তারা কীভাবে মানুষের ব্রেইন ওয়াশ করে? আদৌ কি কারো ব্রেইন ওয়াশ করা সম্ভব? এটা জানতে হলে আগে আপনাকে  কিছু বিষয়ের সাথে পরিচিত হতে হবে।

সিডেটিভ (Sedative):

সিডেটিভ হলো এমন এক ধরনের পদার্থ যা আপনার উত্তেজনা বা বিরক্তির মাত্রা কমিয়ে আনে। আপনার অনুভূতিগুলোকে একটা সাময়িক প্রশান্তি দান করে।
এর মাত্রা বেশি হলে মানুষ অষ্পষ্টভাবে কথা বলে, মাতালের মতো হাঁটতে থাকে, বিবেচনাবোধ কমে যায়, শরীরের অঙ্গগুলো ধীরে ধীরে কাজ করে। এক কথায় বলতে গেলে এটি হলো ঘুমের ওষুধের মতো। সাধারণত, দুশ্চিন্তা কমাতে ডাক্তাররা এটি প্রেসক্রাইব করে থাকেন।
সিডেটিভ যদি খুব বেশি মাত্রার হয় বা অন্য কোনো সিডেটিভ’এর সাথে মিশানো হয় তাহলে এ ধরনের মিশ্র সিডেটিভ অসচেতনতা এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত ঘটাতে পারে।
এটাকে ট্রাঙ্কুইলাইজার (Tranquillizer) ও বলা হয় যা আমাদের সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেমকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।

সিডেটিভ এর ইতিহাস:

আধুনিক ওষুধশিল্পের যুগের অনেক আগে,দুশ্চিন্তা কমাতে ও বিশ্রামের জন্য সাধারণত সিডেটিভ হিসেবে অ্যালকোহল দেয়া হতো। এর উপকার পাবার পর থেকেই অ্যালকোহল বা মদ এতটা জনপ্রিয় হওয়া শুরু করেছে যে এটাকে সর্বকালের সেরা সিডেটিভ বলা হয়।
এই অ্যালকোহলের বিকল্প খুঁজতে গিয়ে উনিশ শতকের শুরুর দিকে ‘ব্রোমাইড’ নিয়ে কাজ শুরু হয়। এই ‘ব্রোমাইড’ আবিষ্কৃত হয় 1826 সালে। এটি আরো জনপ্রিয় হয়। কিন্তু যখন সবাই বুঝলো যে এটি শরীরে বিষাক্ত প্রভাব সৃষ্টি করছে, তখন মেডিকেল কমিউনিটি এটাকে বাদ দিল।
তবে বিংশ শতাব্দির শুরু দিকে ‘ব্রোমাইড’ এর বদলে ‘বারবিটিউরেট’ বানানো হলো যা ছিল কার্যকর ও নিরাপদ সিডেটিভ ড্রাগ। কিন্তু স্বল্পসময়ের মধ্যেই এটার উপর নির্ভরতা, সহনীয়তা ও মারাক্তকভাবে অতিমাত্রায় ব্যবহারের সমস্যা দেখা দিল। তাই আরো নিরাপদ সিডেটিভ তৈরির জন্য চেষ্টা চালানো হলো।
1950 সালের দিকে তৈরি হলো ‘বেনজোডায়াজেপাইন’ যা ছিল বৈধ ও নিরাপদ সিডেটিভ। কিন্তু আমরা এখন জানি যে এই ‘বেনজোডায়াজেপাইন’ একটা আদর্শ দুশ্চিন্তারোধক সিডেটিভের চেয়ে নিম্নমানের আর এটার দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহার মানুষের সিডেশন এর ক্ষে্ত্রে বেশ প্রভাব ফেলে। তবে এগুলো উপেক্ষা করে এটিই বর্তমানকালের বহুল ব্যবহৃত সিডেটিভ।
আগেই বলেছি যে সিডেটিভ মানুষের দুশ্চিন্তার প্রভাব কমিয়ে দেয়। এই মানুষের চেতনার ক্ষমতাকে কমিয়ে দেয়, আর মানুষকে অসচেতন করে তোলে। তাই ঘুম হয়। এখানে একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার রয়েছে।
এই সিডেটিভগুলো মানুষকে অসচেতন করে দেয়। অথচ এই সিডেটিভগুলো কিন্তু অনেক নিম্নমানের।  এই ‘বেনজোডায়াজেপাইন’ সরাসরি মানুষের মস্তিষ্কে প্রভাব ফেলে। মস্তিষ্কের রিসেপ্টরগুলো যাতে আছে অ্যামিনো বিউটাইরিক এসিড,এগুলো মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশের খুব গুরুত্বপূর্ণ ট্রান্সমিটার। অর্থাৎ মস্তিষ্কের কার্যকারিতায় এগুলো খুব বড় প্রভাব রাখে।
এই নিম্নমানের সিডেটিভগুলোই যদি মস্তিষ্ককে এতটা কাবু করতে পারে তাহলে এটা দিয়ে তৈরি আরো সব মিশ্র সিডেটিভের ফলাফর কী হতে পারে!
হ্যাঁ। জঙ্গিরা এ ধরনেরই একটা সিডেটিভ ব্যবহার করতে। ভাষা দিয়ে কাউকেই ব্রেইন ওয়াশ করানো যায় না। এসকল ড্রাগ গ্রহণের ফলে তাদের দ্বারা যেকোন কাজ করানো যায়। কারণ, সেগুলো মস্তিষ্কের প্যাটার্ণই পাল্টে দেয়। একটা মানুষের মনকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। তাকে দ্বারা যা খুশি বলানো যায় বা তাকে দ্বারা  যা খুশি করানো যায়। আসুন কিছু সিডেটিভের আলোকে ব্যাপারটা একটু ব্যাখা করা যাক।

1. Sodium Amytal

Sodium Amytal মানুষের অবাধ্যতার মাত্রা কমিয়ে দেয়,  মানসিক ব্যাখ্যা সহজ করে তোলে এবং যে কেউ ইন্টারভিউ নিতে চাইলে তার সামনে তথ্য প্রকাশ করতে বাধ্য করে। ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময় এটি শুরু হয়েছিল। সৈন্যদের মুখ থেকে তথ্য বের করার জন্য এটি ব্যবহার করা হতো। Sodium Amytal, এক ধরনের Barbiturate, এটি সৈন্যদের যুদ্ধসময়ের অভিজ্ঞতা ও তথ্য ইন্টারভিউ নেয়া ব্যক্তির সামনে প্রকাশ করতে বাধ্য করে।

2. Mescaline

এক ধরনের ক্যাকটাস গাছ থেকে তৈরি করা হয় Mescaline, এটি সাময়িক হ্যাল্যুসিনেশান তৈরি করে অর্থাৎ দৃষ্টিভ্রম ঘটায়। জার্মানরা সর্বপ্রথম এটা তাদের কাজে ব্যবহার করে, পরে U.S. Navy এটাকে সিরাম হিসেবে ব্যবহার করার জন্য পরীক্ষা শুরু করে। উভয় গবেষণাই ব্যর্থ হয়। তারা দেখতে পায় যে এভাবে প্রাপ্ত তথ্যগুলো বিশ্বাসযোগ্য হচ্ছে না। জার্মানরা তখনই চিন্তা করে যে আসলে Mescaline দ্বারা কারো মনের তথ্য বের করা সম্ভব না।

3. Scopolamine

একে বলা হয় ‘শয়তানের শ্বাস’। একে ‘জম্বি ড্রাগ’ও বলা হয়। কাউকে ডাকাতি থেকে শুরু করে, সব ধরনের কাজ করানো যায়। দক্ষিণ আমেরিকাতে এটি অপরাধ ঘটাতে ব্যবহৃত হয়। এই ড্রাগটা একদম ঠিকঠাক অপরাধ করাতে পারে Scopolamine ড্রাগস নিলে যে কেউ আপনাকে আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তুলতে বাধ্য করাতে পারবে, কিন্তু এর কার্যকারিতা শেষ হয়ে গেলে আপনার কিছুই মনে থাকবে না।
একটা ডকুমেন্টারি অনুযায়ী, এটি পাউডার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। কেবলমাত্র মুখে ছিটালেই যেই কেউ তার নিজের মস্তিষ্কের উপর ভারসাম্য হারিয়ে ফেলবেন। এই ড্রাগটি গন্ধহীন, স্বাদহীন আর বেশি মাত্রায় প্রয়োগ মরণঘাতী হতে পারে।

4. Lysergic Acid (LSD)

এটি সত্য মিথ্যা তথ্য নির্ধারণে সহায়তা করে।

5. Amphetamine

অনবরত কথা বলতে বাধ্য করে। ইনজেকশান প্রয়োগ করলে মস্তিষ্কের তথ্যগুলো খুব দ্রুত বলতে থাকে। এটা দিয়ে সত্য তথ্য বের করা যায়।

6. Pipradrol

যেকোনো অনুভূতিকে বিবর্ধিত করে। অর্থাৎ কেউ কোনো বিষয়ে অল্প বলতে চাইলেও পারবে না। ঐ বিষয়ে যা যা জানে সব বলে দিবে।

7. Ritalin

এটি শরীরের সক্ষমতাকে কমিয়ে দিয়ে কথা বলতে সাহায্য করে।

8. TD – Strong Cannabis

এটা খাদ্য বা সিগারেটের মাধ্যমে সেবন করা হয়। একটা বিষয় বললে সে বিষয়ে অসতর্কভাবে তথ্য দিতেই থাকে। যে কাউকে যেকোন বিষয় সম্পর্কে কথা বলানো যায়।

9. Chlorpromazine (thorazine)

এটিও তথ্য উদঘাটনে ব্যবহৃত হয়।

10. Twilight Zone

এটি প্রয়োগ করলে অর্ধেক স্বপ্ন আর অর্ধেক বাস্তব মনে হবে পৃথিবীকে। এটা একটু জটিল প্রক্রিয়া। তবে এটার মাধ্যমে কৌশলে সব তথ্য বের করা যায়।

11. Sodium pentothal

মিথ্যে বলার প্রভাব কমিয়ে দিয়ে সত্য বলতে বাধ্য করে।

12. Versed

যন্ত্রণার সৃষ্টি করে। কিন্তু ড্রাগের প্রভাব শেষ হয়ে গেলে কিছুই মনে থাকবে না।

অর্থাৎ এসমস্ত ড্রাগের কারণে একটা মানুষকে যেকোন পথে পরিচালিত করা যায়। তবে Scopolamine হলো বহুল ব্যবহৃত সিডেটিভ ড্রাগ। এটার বিভিন্ন বৈচিত্র আছে। আর এটা অনেকটা ধুতুরা টাইপ ফুল। আর এটি কলম্বিয়ায় প্রচুর পরিমাণে জন্মে। আর সেদেশে এটা দিয়ে অনেক কিছুই করা হয়। তবে পৃথিবীর আরো অনেক দেশেই রয়েছে। জঙ্গিদের কাছে এগুলো খুব সহজলভ্য আর তারা এভাবেই গাছের উপাদান দিয়ে তৈরি ড্রাগ দিয়ে মিশ্র পদার্থ তৈরি করে তাদেরকে হিপনোটাইজ বা মটিভেট বা পরিচালিত করে। ইচ্ছে মতো কাজ করায়। আরো কিছু জানার থাকলে শুধু গুগলে একটু 'Mind Controlling Drug' লিখে সার্চ দেবেন।
নিচের ভিডিওটা একটা প্রামাণ্যচিত্র। দেখলে অনেক বিষয়ই পরিষ্কার হবে।

World's Scariest Drug (Documentary Exclusive)

কিভাবে জঙ্গী ব্রেইন ওয়াস করা হয়?

জঙ্গিরা কোনোভাবে এসব ছেলেদেরকে নিয়ে যায় বা কিডন্যাপ করে। এরপর যা করতে বলে, তাই তারা করে। কারণ, তাদের তেমন কোনো হিতাহিত জ্ঞান থাকে না। আর এত সংক্ষিপ্ত সময়ে কাউকে বুঝিয়ে ব্রেইন ওয়াশ করা সম্ভব না। কারণ, তার পরিবারের প্রতি ভালবাসা থাকার কথা, আত্মীয়-স্বজনদের কথা চিন্তা করার কথা। কিন্তু এসব ড্রাগ তাদের মস্তিষ্ককে নষ্ট করে দেয়। আর যেকোন কিছু করার জন্য বাধ্য করে। আর সেইসব হত্যাযজ্ঞের পর আমরা শুধু অবাকই হই যে এইরকম একটা ছেলে এসব কাজ কেনো করবে! কারণ, শুধু কথাতে ব্রেইন-ওয়াশ হলে তাদের বিবেচনাবোধ অন্তত থাকতো।
আমার মনে হয় যারা হলিউডের মুভিগুলো দেখেন তারা প্রথম কয়েকটা লাইনেই আমার কথা বুঝতে পেরেছেন। তাই জঙ্গি থেকে আপনার সন্তানকে বাঁচাতে হলে তাকে পর্যাপ্ত সময় দিন এবং তার সবসময় খোঁজ খবর রাখুন। একটু ব্যতিক্রমী কিছু চোখে পড়লেই উপযুক্ত ব্যবস্থা নিন। আর পরিবারে একটা শান্তিপূর্ণ অবস্থা সবসময় তৈরি রাখুন। আর তার সুস্থ বিনোদনের যথেষ্ট মাধ্যম তৈরি রাখুন। তাকেও এই বিষয়গুলো সম্পর্কে সচেতন করে তুলুন। আর অপরিচিতদের ব্যাপারে সবসময় সতর্ক হতে পরামর্শ দিন। বাদবাকী আল্লাহ পাকের ইচ্ছা।
টিউনটি ভাল লাগলে টিউমেন্ট করতে ও শেয়ার করতে ভুলবেন না।

0 comments:

Post a Comment